ক্যাপ্টেন মাহবুব আহমেদ জাকারিয়া, বীর প্রতীক, ই বেংগল ২৭ জুন ১৯৮৬ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১৪ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি ২ ই বেংগল রেজিমেন্টে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে গত ২৪ অক্টোবর ১৯৯০ তারিখে দুল্যাতলী ক্যাম্প থেকে সর্বমোট ৪টি বি টাইপ টহল দলের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স নিয়ে লক্ষীছড়ি উপজেলার দুর্গম দুরছড়ি পাড়া এলাকায় অপারেশন পরিকল্পনা করা হয় এবং তার নেতৃত্বে থাকা টহল দলটি এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তারা সন্ত্রাসীদের কোবরা ইউনিট নামে পরিচিত বিশেষ দলটির দুইজন সন্ত্রাসীকে ঘায়েল ও ১টি ৭.৬২ মিঃ মিঃ রাইফেল উদ্ধারসহ গোপন আস্তানাটি ধ্বংস করতে সক্ষম হন।
টাস্কফোর্সের ১নং টহল দলের টহল অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। কুয়াশাচ্ছন্ন প্রত্যুশের আলো আধাঁরের উপর ভিত্তি করে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া এবং তার সঙ্গী নায়েক মোঃ আবদুল কাদের মজুমদার সন্ত্রাসীদের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এক সময় তারা উভয়েই আবিষ্কার করেন যে সন্ত্রাসীরা তাদের আস্তানার দিকে যাওয়ার সকল পথেই বেল গাছের কাঁটা বিছিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। অকুতোভয় ক্যাপ্টেন জাকারিয়া এবং নায়েক কাদের সকল বাঁধা উপেক্ষা করে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যান।
হঠাৎ মাত্র ৩/৪ গজ দূরে দা হাতে একজন লোককে পাহাড়ের ছন গাছের ঝোপের পিছন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া এবং নায়েক কাদের মুহূর্তের মধ্যে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে নিঃশব্দে বেঁধে ফেলেন। কিছু সময় পরেই সন্ত্রাসীদের আরো দুই জন সদস্যকে অস্ত্র কাঁধে নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখতে পান। প্রায় ৪০/৫০ গজের মধ্যে এসে পৌছালে হঠাৎ করে প্রথম সন্ত্রাসী টহল দলের এই দুঃসাহসিক সদস্যকে দেখে ফেলে এবং তার হাতের ৭.৬২ মিঃ মিঃ রাইফেল দিয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে। তৎক্ষণাৎ গর্জে উঠে ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার হাতের এসএমজি। সম্মুখের ২জন সন্ত্রাসী চোখের নিমিষে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং ক্যাপ্টেন জাকারিয়া কাল বিলম্ব না করে আস্তানাটি দখল করে নেন। সেখানে ৪টি ব্যারাক, রান্নার স্থান ও ৩ টি লাইট মেশিনগান (এল এম জি) ট্রেঞ্চ সনাক্ত সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ এবং নানাবিধ দ্রব্যাদি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে জোন কমান্ডারের অনুমতি নিয়ে সম্পূর্ন আস্তানাটি ধ্বংস করা হয়। উল্লেখ্য যে, সন্ত্রসীরা ঘোষণা দিয়েছিল সেনাবাহিনী কখনোই কোবরা ইউনিটের সদর দপ্তরে প্রবেশ করতে পারবে না।
পরবর্তীতে ১৮ জুলাই ১৯৯১ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাপ্টেন মাহবুব আহমেদ জাকারিয়া’কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।