বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা দেশকে ভালোবাসে তারা কখনও দেশ থেকে পালায় না। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি বলেই গত ১৫ বছরে চরম নির্যাতন, নীপিড়ন সহ্য করে, শত শত নেতাকর্মীকে হারিয়েও আমরা বাংলার মাটি আকড়ে পড়ে থাকি। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে কারও কোনো কিছু দাবী করা লাগবেনা। মন্দির, মসজিদ, মঠ, গীর্জা পাহারা দেয়া লাগবেনা। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে, সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বিগত ফ্যাসিবাদের আমলের গুম, খুন নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, জামায়াতের নেতাদের প্রহসনের বিচার করে অন্যায়ভাবে ফাসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন মেধাবী দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলার জনগন এসব হত্যাকান্ডের বিচার করবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা আগামীর বাংলাদেশকে যুবকদের হাতে তুলে দিতে চাই। তারাই দেশের অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম সরকার গঠন করলে নারীদের অধিকার নিশ্চত করবে। নারীরা রসুলের সময় থেকে পুরুষদের পাশে থেকে কাজ করেছেন, যুদ্ধ করেছেন। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে বেকার থাকবেনা। শিক্ষিত দূর্নীতিবাজার তৈরী হবেনা। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা না করে কর্মবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর ‘২৪) বেলা তিনটায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা জামায়াতের সভাপতি উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে এবং জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খলিলুর রহমান মাদানী, অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ, প্রভাষক ওমর ফারুক প্রমূখ।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর জামাত ইসলামের রাজধানী নামে খ্যাত সাতক্ষীরার কর্মী সমাবেশ বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কর্মী সমাবেশ উপলক্ষে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সম্েমলনকে কেন্দ্র করে সকাল শহরের সকল রাস্তায় মানুষের ভিড়ে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, কয়েক হাজার ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। তারপরও ফ্যাসিবাদের প্রেতান্মরা এখনও মাঝে মাঝে ‘হুতুমপ্যাচা’ হয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তাদের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। আগামীর যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যেন বাংলার মাটিতে আবার কোনো স্বৈরাচার দাঁত বসাতে না পারে।
তিনি বলেন, জামায়াতের ওপর বিগত সময়ে যে নির্যাতন হয়েছে তার সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাতক্ষীরার জনগন। এর আগে সকালে তিনি শহরের পল্লী মঙ্গল স্কুল মাঠে সাতক্ষীরা জামায়াতের এক রুকন সম্মলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। রাতে সার্কিট হাউজে সুশীল সমাজের নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা ও নৈশভোজে মিলিত হবেন তিনি।