প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর রয়েছে স্বতন্ত্র ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতি। উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে সাতক্ষীরার শ্যামনগর অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রম প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর’২৪) সকালে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাকে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, সবুজ সংহতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রদর্শনীতে উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, দাতিনাখালী ও তারানীপুরের মুন্ডা, কাহার, জেলে ও ঋষি সম্প্রদায়ের সাতটি স্টলে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐহিত্যের নানা নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়।
প্রদর্শিত হয় মুন্ডাদের তীর-ধনুক, শিং, পালক, বল্লব, কুচ, বুজ, কড়ি, হাড়িয়া, খাদ্যাভাস, টোপর, পূজা ও বিবাহের উপকরণ, কাহার সম্প্রদায়ের পালকি, ঢোল, খঞ্জন, কাশি, বেহলা, একতারা, জেলেদের জাল, দড়ি, নৌকা, পোলো, খারা ও ঋষিদের জুতা সেলাইয়ের উপকরণ। পাশাপাশি নিজ সংস্কৃতির গান ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানান তারা।
অনুষ্ঠানে জেলে সুপদ মন্ডলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ গাজী, বারসিক এর সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা মনিকা পাইক, অষ্টমী মালো, দলিত এর প্রোগ্রাম অফিসার রতিকান্ত মন্ডল, কৌশল্যা মুন্ডা, এসএসএসটির প্রকাশ মন্ডল, মাছুম বিল্লাহ প্রমুখ।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী আনন্দিনী মুন্ডা বলেন, অতীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গুরুত্ব পেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেকেই পেশা বদল করছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুবই প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, নানা কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।