কেননা গত ১৭বছরে সাতক্ষীরার উপকূলবাসি দানা’সহ ১৪টি ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছেন। দেখেছেন বেশ কয়েকটি সুপার সাইক্লোনের তান্ডব।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। সিডরের দগদগে ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আইলা। আইলার আঘাতে প্রাণহানীসহ লন্ডভন্ড হয় গোটা উপকূল। প্রকৃতির সবুজ দেওয়াল ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। সেই ক্ষতচিহ্ন সারার আগেই ২০১৩ সালের ১৬ মে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’। এরপর ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’। ২০১৬ সালের ২১ মে উপকূলে বৃষ্টি ঝরিয়ে চলে যায় ‘রোয়ানু’। ২০১৭ সালের ৩০ মে বৃষ্টি আর জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। ২০১৯ সালের ৩ মে আসে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। ২০২০ সালের ২০ মে উপকূলের সবুজ দেওয়ালে চরম আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’। চুল ছেড়ার মতো করে গাছপালা ছিড়ে তছনছ করে দেয় সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’। আচড়া দেওয়ার মতো করে ভাঙে উপকূলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও ফসলের ক্ষেত। ফলন্ত গাছগুলো ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যায়। সেই দগদগে ক্ষতে নুনের ছিটা দিতে ২০২১ সালে ২৬ মে আঘাত হানে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ২০২২ সালের ১২ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। এরপর ২০২৩ সালের ১৪ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এরপর সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে। এ সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় খুলনা, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। সর্বশেষ আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’।প্রত্যেকটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। ঝড়ের প্রভাবে অঝরে বৃষ্টি নামে। এতে ঝড়ের তান্ডবে যে ক্ষতি হয়, তার শতগুণ ক্ষতি হয় বাঁধ ভেঙে। তাই ঝড়ের কথা শুনলেই আৎকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন ঝুকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে।এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাবে দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি ঝরেছে কার্তিকের আকাশ থেকে। তার সাথে চলেছে পূবের বাতাস। স্থানীয় উপকূলের সাধারণ মানুষ দেখেছে পূবের বাতাস মানেই বেঁড়িবাঁধ ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। এঅবস্থায় মানুষের ভয় ও শঙ্কার দানাবাঁধে তাদেন মনে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের অন্তত নয়টি পয়েন্টে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাসে এসব পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে যাবে গোটা জনপদ।বারবার ঝড় জলোচ্ছাসের মতো দুর্যোগে পড়া মানুষের ভয় আতংক যেন পিছু ছাড়ছে না।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ষাটের দশকের বেঁড়িবাঁধ সবই দুর্বল। সবই তারা শুষ্কমৌসুমে তদারকি কারণে কিছুটা হলেও ঝুঁকিমুক্ত। তবে আড়াই কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ রয়েছে অতিঝুঁকিতে। সেগুলো টানা তিনদিন জিও ব্যাগ নিয়ে কাজ করছেন, সাথে সাথে তদারকির মধ্যেও রেখেছেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির দুটি পয়েন্টে ২০০ মিটার, দাতিনাখালীর একটি পয়েন্টে ২০০ মিটার, গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর সোরা ও দৃষ্টিনন্দনে ৩০০ মিটার, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সেন্ট্রাল কালিনগর, হরিনগর বাজার ও কদমতলায় ৩৫০ মিটার, কৈখালী ইউনিয়নের বৈশখালীতে ১৫০ মিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া রমজাননগরের দ্বীপ গ্রাম গোলাখালীর সবটাই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী।