সাতক্ষীরায় স্বদেশ সাতক্ষীরা, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (CLEAN) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (BWGED) বুধবার (২৩ অক্টোবর ‘২৪) সকালে যৌথভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসমাবেশের আয়োজন করে।
এই সমাবেশটি বিশ্বব্যাপী একটি বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ ছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। সমাবেশটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ওয়াশিংটন ডিসি-তে তাদের বার্ষিক সভার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
বক্তারা সমাবেশে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধানের কথা উল্লেখ করেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ কমানোর অঙ্গীকার করলেও, বাংলাদেশে রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন অব্যাহত রয়েছে। বক্তাদের মতে, এটি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
স্বদেশ সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা এমন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে যা এই সংকটের মূল কারণ। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক এবং অবিলম্বে পরিবর্তন করা উচিত।”
সমাবেশে উপস্থিত প্রতিবাদকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তথাকথিত পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি, বিশেষ করে কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজ (CCS) এর বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা ছিলো। তারা এসব প্রযুক্তিকে “ভুয়া সমাধান” হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যেগুলো মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। সমাবেশের কেন্দ্রীয় দাবি ছিলো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেন জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে তাদের সব ধরনের অর্থায়ন বন্ধ করে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে সৌর ও বায়ু শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ায়।
বক্তারা আরো বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই ও নিরাপদ ভবিষ্যতের পথ খুলে দিতে পারে। তারা উল্লেখ করেন যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা হলে, বাংলাদেশ শুধু কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারবে না, বরং সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। বক্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির সম্মুখীন দেশগুলির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থায় দ্রুত স্থানান্তর অপরিহার্য, এবং এটি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, উন্নয়নকর্মী শ্যামল বিস্বাস, নাগরিক নেতা আলিনুর খান বাবুল, যুব প্রতিনিধি তৌহিদ জামান, হৃদয় মন্ডল, বৈশাখী , প্রমুখ।
এই সমাবেশের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, তারা যেন জলবায়ু সংকট মোকাবিলার নামে “মিথ্যা” প্রযুক্তির পেছনে না ছুটে, প্রকৃত ও টেকসই শক্তি সমাধানের দিকে মনোযোগ দেয়। বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি বিনিয়োগই দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শক্তির নিরাপত্তার জন্য একমাত্র বাস্তবিক সমাধান হতে পারে।