২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে তিনটার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের আব্দুল মাজেদ মোল্লার ছেলে আব্দুর রউফকে বাড়ি থেকে তুলে এনে নির্যাতনের পর সখীপুর কলেজ মাঠে ডান পায়ের হাঁটুতে গুলি করা ও দোকান ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গুলিতে পা হারানো আব্দুর রউফ বাদি হয়ে আজ মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর ‘২৪) দেবহাটা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও কালিগঞ্জ থানার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট, তৎকালিন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩০ জনের বিরুদ্ধে আমলী-৭নং আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক মহিদুল হাসান মামলাটি এজাহার হিসেব গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্যতম আসামীরা হলেন, কালিগঞ্জ সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান, দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক চন্দ্র বিশ্বাস, কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন পাড়, তার ভাই শহীদুল ইসলাম, পূর্ব নারায়নপুরের ব্যবসায়ি বরুন ঘোষ ও সাদপুর গ্রামের প্রদীপ ঘোষ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে তিনটার দিকে দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ি আব্দুর রউফ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় আসামী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান ও তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে পুলিশ ও আসামী আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে হাতকড়া লাগিয়ে হাত ও পা বেঁধে নির্যাতন চালায়। দোকানঘর ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়। পরে তাকে পুলিশ পিকআপে করে সখীপুর কলেজ মাঠে নিয়ে আসা হয়। এ সময় উপপরিদর্শক বসিরউদ্দিন ও উপপরিদর্শক জিয়াউল হক তার ডান হঁাটুতে দুই বার গুলি করে হাড় গুড়িয়ে দেয়। পরে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়। এখন তাকে পঙ্গুত্ব নিয়ে চলাচল করতে হয়। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক বসিরউদ্দিন বাদি হয়ে তার নাম উল্লেখসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় জিআর-১৫৫/১৩ নং মামলা দায়ের করেন। যাহা এখনো বিচারাধীন। এ মামলায় বাদি ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। তখন পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় বর্তমানে উপযোগী সময় বুঝতে পেরে আদালতে মামলা করা হলো।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুস সামাদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।