কালিগঞ্জের নসু বিবি নামে এক বাক প্রতিবন্ধি নারীকে পুলিশি হয়রানি ও তাকে জমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদ করায় সাপ্তাহিক মানবাধিকার প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক বাদশা মিয়াকে নড়াইল থেকে তুলে এনে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের পর সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর বাইপাস সড়কের শফিকুলের দোকানের সামনে থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাদশা মিয়ার বাবা ডাঃ নূর ইসলাম বাদি হয়ে ২০১৩ সালের হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারন) আইনের ১৫ (১) ধারায় প্রতিকার চেয়ে সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর ‘২৪) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা (পিটিশন-৬) দায়ের করেন।
বিচারক চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ৫(৫) ধারা অনুযায়ী ডিআইজি খুলনাকে একই আইনের ২(৩), ২(৪),২(৫), ২(৭), ৭(১), ৮(১), ১৩(১), ১৪(১) ধারা মতে উল্লেখিত আইনে বর্ণিত ধারার আলোকে তিনি নিজে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নীচে না এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে আগামি পহেলা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপর আসামীরা হলেন, কালিগঞ্জ সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার মোহাইমিনুল রহমান, কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বুরহানউদ্দিন, গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার, গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আরিফুর রহমান ফরাজী, গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ মোহসীন আলী তরফদার, সদর থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তফা আলম, উপ-পরিদর্শক মানিক কুমার সাহা, কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান, একই থানার উপ-পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ জহিরুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান।
মামলার বিবরনে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহরের মধু মোল্লারডাঙীর পাইলস ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ডাঃ নূর ইসলামের ছেলে বাদশা মিয়া সাপ্তাহিক মানবাধিকার প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক। কালিগঞ্জের বাক প্রতিবন্ধি নসু বেগমকে তৎকালিন পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে কালিগঞ্জ সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার মোহাইমিনুল রহমান, কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন। এ ঘটনা জানতে চাইলে পুলিশ বাদশা মিয়াকে গালিগালাজ করে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে নসু বিবি ২০২১ সালের ১১ এপ্রিলক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে পুলিশ তাকে বাড়িতে যেয়ে হুমকি ধামকি দেয়। একপর্যায়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ৪ মার্চ সকাল ৮টায় নসু বিবি মারা যান। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে নড়াইল জেলার কলবাড়িয়া ইউনিয়নের পারোখালি হাইস্কুলের সামনে থেকে বাদির ছেলে বাদশা মিয়া, বাদির ভাইপো মাসুদ পারভেজ ও জাহানুর হোসেনকে দুটি মাইক্রোবাস যোগে সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশ সাতক্ষীরায় নিয়ে আসে। পরে বাদশাকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে আটকে রাখে চারজন পুলিশ হাত ও পা ধরে রেখে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বেতের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন। ২০২১ সালের পহেলা মে বাদশা মিয়াকে বাইপাস সড়কের কামাননগরের শফিকুলের দোকানের সামনে এনে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে অস্ত্র ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এর অগে বাদশার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে পুলিশ। এ ছাড়াও তাকে সাতক্ষীরা সদর ও কালিগঞ্জচ থানার কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রিমাণ্ডের ভয় দেখিয়ে বাদশা এর কাছ থেকে কয়েক দফায় তিন লাখ টাকা আদায় করা হয়। এরপর থেকে বাদি ও তার পরিবারের সদস্যরা এক বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক ছিলেন। বাদশা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরও সদর থানায় ডেকে এনে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে একটি এফিডেফিডে সাক্ষর করানা হয়। তখন পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় মামলা করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকুলে থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হইলো।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. জিয়াউর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।