২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার চিনেরডাঙা গ্রামের সিরাজুল সরদারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, দেবহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল আহম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহতের বোন আনজুয়ারা খাতুন বাদি হয়ে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা (পিটিশন-৫)দায়ের করেন। বিচারক চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ৫(৫) ধারা অনুযায়ী ডিআইজি খুলনাকে একই আইনের ২(৩), ২(৪), ২(৫), ২(৭), ৭(১), ৮(১), ১৩(১), ১৩(২) ও ১৪(১) ধারাসহ উল্লেখিত আইনে বর্ণিত ধারার আলোকে তিনি নিজে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নীচে না এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্যান্য প্রধান আসামীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঝ পারুলিয়ার মোঃ মনিরুজ্জামান ওরফে মনি, উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে সবুজ, সখীপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, ভোমরার ব্যবসায়ি চিনেরডাঙা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার চিনেরডাঙা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে জামায়াত কর্মী সিরাজুল সরদার সবজির ব্যবসা করতো। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আসামী চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল আহম্মেদ এর নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা পুলিশ ভ্যান ও মটর সাইকেলযোগে এসে সিরাজুল সরদারের বাড়ি ঘেরাও করে। আসামী শরিফুল ইসলাম ও একরামুল কবীর ঘরে ঢুকে সিরাজুল সরদারকে জোরপূর্বক বাইরে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ মারপিট করতে থাকলে মামলার বাদি আনজুয়ারা খাতুন ভাই সিরাজুলকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। পুলিশ সিরাজুলকে তাদের পিকআপে তুলে নিয়ে যায়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে সবুজের শরনাপন্ন হলে আসামী আলী মোর্তজা মোঃ আনোয়ারুল হক ভিকটিমের স্বজনদের কাছে ৫০ হাজা টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ২৯ এপ্রিল ভোর সাড়ে তিনটার দিকে ভিকটিমের স্বজনরা সখীপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের কেওড়াতলা নামক স্থানে কালভার্টের দিকে গুলির শব্দ শুনতে পায়। সাক্ষী সিরাজ সরদারের মোবাইল ফোন ও ঘেরের বাসায় অবস্থান করা সাঈদ হোসেন সরদার ও মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে মামলার বাদি ও স্বজনরা জানতে পারেন যে আসামী পুলিশ কর্মকর্তা কাজী জালাল আহম্মেদ এর নির্দেশে পুলিশ সিরাজুল সরদারের বুকে গুলি করে। পুলিশ রক্তাক্ত সিরাজুলকে পুলিশ পিকআপে করে নিয়ে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চলে যায়। সেখানে সিরাজুলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সিরাজুলের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিকেলে সিরাজুলের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নিহত সিরাজুল সরদারসহ অজ্ঞাতনামা ১৫জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করিয়া ২৯ এপ্রিল রাতেই থানায় ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইন তৎসহ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারাসহ কয়েকটি ধারায় মামলা (জিআর- ৫১/১৪, দেবঃ) দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, ঘটনার সময় পরিস্থিতি মামলা করার জন্য অনুকুলে না থাকায় বর্তমানে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা দায়ের করা হলো।
বাদি পক্ষের আইনজীবী সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অ্যাড. হাফিজুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।