ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র করে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার উত্তর কুলিয়া গ্রামের মারুফ হোসেনসহ দুই জনকে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ডাঃ আ,ফ,ম রুহুল হক, সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাতক্ষীরা র্যাব ক্যাম্পের মেজর আহম্মেদ হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজাউল হক ও দেবহাটা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার গোলজারসহ ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর’২৪) নিহত মারুফ হোসেনের ভাই মোকফুর রহমান বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক চঁাদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ৫(৫) ধারা অনুযায়ী ডিআইজি খুলনাকে একই আইনের ২(৩), ২(৪),২(৫), ২(৭), ৭(১), ৮(১), ১৩(১), ১৪(১) ধারা মতে উল্লেখিত আইনে বর্ণিত ধারার আলোকে তিনি নিজে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নীচে না এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে আগামি ২৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে অপর আসামীদের মধ্যে রয়েছেন দেবহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক চন্দ্র বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক, পারুলিয়ার মনিরুজ্জামান মনি, সখীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। মামলায় ৬০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার উত্তর কুৃলিয়া গ্রামের আশরাফুল আলমের ছেলে মারুফ হোসেনের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীলীগ নেতা ও তৎকালিন কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হকের বিরোধ ছিল। সাবেক সাংসদ ডাঃ রুহুল হকের সুপারিশে ও পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে ৬ থেকে ৩৩ নং আসামী ও ৪৬ থেকে ৬০ নং আসামীরা ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি বিকেল চারটার দিকে আসামী গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে ভিকটিম মারুফের অবস্থান নিশ্চিত করে নেয়। তারা উপজেলার গোবরাখালি গ্রামের শ্বশুর হাশেম গাজীর বাড়ি ঘেরাও করলে মারুফ ফিংড়ির দিকে পালাতে যেয়ে বালিথা গ্রামের কার্তিক সরকারের বাড়ির খাটের তলায় ঢুকে পড়ে। আসামীরা সেখান থেকে তাকে বের করে মারপিট করতে করতে পুলিশ পিকআপে করে দেবহাটা থানার দিকে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল ১০টার দিকে কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদৃুল হকের কাছে যায় মারুফের স্বজনরা। তাদেরকে তাড়িয়ে দেয় চেয়ারম্যান। ওই দিন সন্ধ্যায় চৌকিদার মঞ্জুর চেয়ারম্যান আসাদুল হকের কথামতো মারুফের শ্বশুর বাড়ি থেকে পঁাচ লাখ টাকা নিয়ে আসে। ভিকটিমকে ছাড়াতে ওই দিন দুপুর দুটোর দিকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যায় মারুফের স্বজনরা। একান্তে কয়েকজন আসামী আলোচনা করার সময়একটি অঙ্গ হানি হলেও জীবনে বঁাচিয়ে রেখে তাকে মুক্তির আবেদন জানান স্বজনরা। চেয়ারম্যান পাঁচ লাখ টাকা দাবি করলেও এক লাখ টাকা দিয়ে মুক্তির পর বাকী টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। একপর্যায়ে গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরের কথামত স্বজনরা বাড়ি চলে আসে। ২৬ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নারিকেলী গ্রামের জিয়ার বাড়ির নিকটবর্তী রাস্তার উপর মারুফ ও অপর একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে পিকআপ থেকে নামিয়ে গুলি করে পুলিশ। পরে তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পিকআপে তুলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুরে মারুফসহ দুইজনের লাশ সদর হাসপাতালে দেখতে যান স্বজনরা। পরে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে মারুফের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থনে মারুফের লাশ দাফন করা হয়। মারুফকে হত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ রাতেই দেবহাটা থানায় ভিকটিমসহ ৫০/৬০জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করে। অভিযোগপত্র শেষে মামলা দুটি বর্তমানে এসটিসি ১৮৭/১৭, ১৮৮/১৭ জজ কোর্টে বিচারাধীন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পেশকার টিটু মল্লিক।