গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি চলছে চাঁদাবাজি। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় করা হচ্ছে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ। ফলে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় রাত জেগে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। চাঁদা না দিলে করা হচ্ছে মারপিট। অনেকেই চাঁদা না দিতে পেরে ঘর ছেড়েছেন।
কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় এক শ্রেণীর অতি উৎসাহী ব্যক্তি হিন্দু এলাকায় উল্লাস শুরু করে। ৫ আগষ্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কৃষ্ণনগর ঘোষপাড়ার কালিপদ ঘোষের ছেলে গোবিন্দ ঘোষের বাড়ির দরজা ভাঙচুর করে ওই পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি স্টিলের থালা ব্যতীত সর্বস্ব লুট করে। এরপর তারা কৃষ্ণনগর বাজারের পাশে আল্লারদান জুয়েলার্সের মালিক আবু তালেবের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে ৫ আগষ্ট দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঘোষপাড়ায় ২০/২৫ জন যুবক মিলে পাহারা বসায়। পরদিন ঘোষপাড়ার পশু চিকিৎসক ডাঃ সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। রামনগরের গ্রামপুলিশ শাহীন আলমের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন পূর্ব কালিকাপূর গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।
কৃষ্ণনগর গ্রামের অশোক কুমার ঘোষের ছেলে বিকাশ কুমার ঘোষ জানান, গত ৫ আগষ্ট রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গোবিন্দ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির পর তারা পাড়ায় পাহারার ব্যবস্থা করেন। প্রতি রাতে ২৪/২৫ জন পাহারা দেন। বৃহষ্পতিবার রাতে সানাপাড়ায় ডাকাতির চেষ্টাকালে স্থানীয়দের বাঁধার মুখে শূন্যে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চলে আসে ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা রাত একটার দিকে নেঙ্গী গ্রামের অমল দেবনাথের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে তারা বামনহাটি গ্রামের অমল দেবনাথের ছেলে মিন্টু দেবনাথ ও তারক দেবনাথের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। রাত পৌনে চারটার দিকে কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা ডাকাত দলের সদস্যরা (৬ থেকে ৭ জন) তাদের পাড়ায় মাধাই ঘোষের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পাহারাদাররা চিৎকার শুরু করলে ডাকাত দলের সদস্যরা গুলি করতে করতে ছত্রভঙ্গ হয়ে দুই দিকে চলে যায়। গুলিতে তিনিসহ (বিকাশ) গুরুপদ ঘোষের ছেলে বিমল ঘোষ, দীলিপ ঘোষের ছেলে শ্যামাপদ ঘোষ, মাধাই ঘোষের ছেলে প্রলেশ ঘোষ ছোট্টু, প্রিতম ঘোষ সোনা ও গৌরপদ ঘোষের ছেলে অরুন কুমার ঘোষ জখম হন। ভোরে তাদেরকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে পাউখালির লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি হন। অরুন ঘোষ ব্যতীত পাঁচজনকে সেখানে অপারেশন করান ডাঃ ফিরোজ আহম্মেদ। বিকেলে তারা বাড়িতে চলে আসেন। এ ঘটনায় বিমল ঘোষ শুক্রবার সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার তাদের গ্রামের সত্য হালদারের বাড়ির তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে পাহারাদারদের বাধার মুখে ডাকাত দলের সদস্যরা চলে যায়।
এদিকে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভিন জানান, ৫ আগষ্ট দিবাগত রাত তিনটার দিকে ৩০/৪০ জনের একদল সন্ত্রাসী তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে হামলা চালায়। হামলার কিছুক্ষণ আগে তিনি খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে হামলাকারিরা তার বাড়ির নগদ টাকা ও সোনার গহনাসহ কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। পরে তারা পেট্রোল ঢেলে মোটর সাইকেলসহ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তিনি সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করলেও কয়েক ঘণ্টা পর সাড়া পান। শুক্রবার গভীর রাতে কালিকাপুরে ডাকাতি করতে যেয়ে দুটি বোমা বিষ্ফোরন করে ডাকাত দলের সদস্যরা।
ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, বড়িতে হামলা না করার শর্তে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। চাঁদা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় কালিকাপুরের রুহুল কুদ্দুস ও রঘুনাথপুরের নজরুলসহ কমপক্ষে এক ডজন লোককে মারপিট করেছে ওই সন্ত্রাসী চক্রটি। টাকা দিতে না পারায় তারন এলাকার কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করেছে।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস দীপু জানান, কৃষ্ণনগর একটি অপরাধ প্রবণ এলাকা। পুলিশ প্রশাসন থানায় কাজ শুরু করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।