ধানের বস্তা ভর্তি ট্রাকের উপর শ্রমিক বহনকারি ট্রাক উল্টে দুই শ্রমিকের মৃত্যু ও ২৩ জন জখম হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন কুমিরা মহিলা কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি গ্রামের মন্টু হোসেনের ছেলে সুমন হোসেন (৩৫) ও একই উপজেলার জয়নগর গ্রামের ওমর আলীর ছেলে আবুল হোসেন (৪৬)।
আহতরা হলূন, শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী বাবুর্চি ফরিদা খাতুন (৫৪), একই গ্রামের আনারুল মোড়লের ছেলে আরাফাত হুসাইন মিঠু(২১), একই গ্রামের আব্দুর জব্বারের ছেলে শ্রমিক সরদার এশার আলী (৪৫), হযরত আলীর ছেলে ইয়াছিন আলী (৩৫), মোকছেদ আলী তরফদারর ছেলে আব্দুস সাত্তার (৩৪) সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে শুকুর আলী (৫২), একই উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ট্রাকের হেলপার ইমনসহ (১৯) ২৩জন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি গ্রামের আনারুল মোড়লের ছেলে আরাফাত হুসাইন মিঠু(২১) জানান, তিনি ও তার দুলাভাই একই গ্রামের সুমন হোসেনসহ ২৪জন শ্রমিক গত ২৬ এপ্রিল শরিয়তপুর জেলার লক্ষীপুরা এলাকার ভজেশ্বর বাজারের পাশে মুজিবর মোড়ল ও শেন ফকিরের ধান কাটতে যান। কাজ শেষে সোমবার সন্ধ্যায় তারা ২৪৫ বস্তা ধান নিয়ে সাতক্ষীরা শহরতলীর কাশেমপুরের সাগর হোসেনের ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২০-০৪৮৫) বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেন। রাতে ঘুমের ঘোরে পড়ে যাওয়া রোধে ধানের বস্তার উপর থাকা ১৯ জন শ্রমিককে মশারির নেট দিয়ে কোমরের সঙ্গে ট্রাকের ডালায় বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়। টুঙ্গিতে এসে তারা রাতের খাবার খান। মঙ্গলবার ভোরে ট্রাকটি যশোরের চুকনগর পৌঁছালে চালক সাগর হেলপার কাশেমপুর গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের ছেলে ইমনকে চালাতে বলেন। এ সময় ইমন বাজেভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল। বিষয়টি চালক সাগরকে বলার পরও তিনি কথা শোনেননি। একপর্যায়ে গাড়িটি পাটকেলঘাটা এলাকায় কুমিরা মহিলা কলেজের সামনে রাস্তার বাম দিকে নিয়ন্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে তার দুলা ভাই সুমনসহ ধানের বস্তার উপর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ১৯জন শ্রমিক ধানের বস্তা ও ট্রাকের নীচে চাপা পড়েন। কেবিনের মধ্যে বসে থাকা তিনি ও বাউচি কাশিমাড়ি গ্রামের ফরিদা খাতুন (৫৪) ও চালকের আসনে থাকা হেলপার ইমনসহ ছয়জন জখম হন। ডালা খুলে চালক সাগর পালিয়ে যায়। এ সময় ধানের বস্তার নীচে ও ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে তার দুলাভাই সুমন মারা যায়। ফায়ার ব্রিগেড খবর পেয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল হোসেন মারা যান।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালর জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ও ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে হেলপার ইমন, জাহিদুরসহ ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদুর রহমান শ্রমিকবাহি ট্রাক উল্টে দু্ইজনের মৃত্যু ও ২৩ জন জখম হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আহতদের চিকিৎসা চলছে। নিহতদের লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। দূর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়েছে।