ঘূর্নিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকার নদ-নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভাঙনে আতংক রয়েছে উকুলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। তবে, ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে চলছে তীব্র তাপদাহ। সেই সাথে শ্যামনগর, আশাশুনিসহ ভাঙন কবলিত দ্বীপ ইউনিয়ন শ্যামনগরের গাবুরায় তীব্র দাবদাহ জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তবে, শনিবার দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা শহর কিছুটা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও কিছুক্ষন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে, আকাশ কিছুটা মেঘাছন্ন ও গুমোট ভাব বিরাজ করছে। এছাড়া উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও চুনা নদীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, ভাঙন আতংকে রয়েছেন উকুলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার বিছিন্ন দ্বীপ শ্যামনগরের গাবুরা এলাকার মানুষ রয়েছেন সবচেয় বেশী আতংকে। অত্যান্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে সেখানকার বেড়িবাঁধ। এছাড়া নবুবুনিয়াসহ অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ তৈরীই হয়নি বহুদিন। সুতরাং বড় ধরনের কোন দূর্যোগ এলে তলিয়ে যাবে গ্রামটি। ‘দৃষ্টিনন্দন’ মিঠা পানি প্রকল্পের পাশে খুবই নিচু একটি বেঁড়ি বাঁধ রয়েছে। সেখানে বেশ কিছুদিন যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ৫ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তত করে রাখা হয়েছে ভাঙন রোধ করার জন্য। এলাকাটি তলিয়ে গেলে দৃষ্টিনন্দন পানির প্রকল্পটিতে লবনাক্ত পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে পানি সংকটে চরম আকার ধারন করবে।
ভাঙন কবলিত গাবুরা ইউনিয়ন পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড পোল্ডার-১ এর নির্বাহী প্রকশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, ভাঙন রোধের জন্য ২০ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া গাবুরায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। জেলেখালী এলাকা থেকে শুরু হয়েছে এই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান কার্যক্রম। ২০২৪ সালের জুন মাস নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা আবহায়ওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা সাতক্ষীরার উপকুলে আঘাত আনার সম্ভাবনা খুবই কম। মোংলা বন্দর থেকে এটি ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আঘাত আনার সম্ভাবনা বেশী। তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা উপকুলৈ বর্তমান ৪ সতর্ক সংকেত চলছে। তবৈ, ঘূণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরায় আজ সন্ধ্যা থেকে আগামী ২/১ দিন আকাশ মঘোছন্নসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসত জানান, আসন্ন ঘূর্নিঝড় ‘‘মোখা’’কে সামনে রেখে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে মোট ৮৮৭টি সাইক্লোন সেন্টার কাম আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত করে রাখা হয়েছে। এতে ৪ লক্ষ মানুষের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ৪১৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও ৫ হাজার সিপিপি সদস্য প্রস্তত রাখা হয়েছে। এছাড়া উপকুলীয় এলাকার মানুষকে সচেতন করার লক্ষ ও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচার প্রচারনা চালানো হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, দূর্যোগ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সকল প্রস্তিতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় স্বেছাসেবক টীমসহ সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে কাজ করছেন।