সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্যা হত্যা মামলার প্রধান আসামী খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে থাকে ঢাকার খিলখেত থানাধীন একটি নিজস্ব ফ্লাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল গদাইপুর বিলে মঞ্জুরঙল মোল্লার চিংড়ি ঘেরের দু’ কর্মচারিকে বেঁধে রেখে মাছ লুটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে ক্ষুব্ধ হন গদাইপুর গ্রামের মোজাহার সরদারের ছেলে শাহানেওয়াজ ডালিম। এরই জের ধরে ডারিমের দু’ ভাই ও তাদের লোকজন ৯ এপ্রিল সবেবরাতের রাতে গদাইপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরবৎ মোল্লা ও মঞ্জুরল মোল্লার চিংড়ি ঘের লুটপাট চালায়। ১০ এপ্রিল সকালে ওই মাছ চেয়ারম্যান, তার ভাই গদাইপুর মাছের সেট বিক্রি করতে গেলে শরবত মোল্লার সঙ্গে বচসা বাধে। এ নিয়ে হাতাহাতিও হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তার ভাই টগরকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এমন প্রচার দিয়ে তার পক্ষের লোকজনকে সংগঠিত করে শরবত মোল্লাকে তার বাড়ির পাশের পুরাতন কবরস্থানের পাশে কুপিয়ে ও পিটিয় জখম করে ডালিম ও তার লোকজন। শরবতকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে স্ত্রী শরিফা খাতুন ও প্রতিবেশি আরিফা খাতুন, তুয়ারডাঙার সুবিমল বিশ্বাসসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। ভাঙচুর করা হয় তাদের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি। শুক্রবার সকালে তার দু’ ছেলে সবুজ ও শিমুল, তাকে ও স্বামীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভর্তি কর। ১১ এপ্রিল গভীর রাতে একটার দিকে শরবৎ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামের ক্ষুব্ধ মানুষজন ডালিম ও তার কয় সহযোগীদের বাড়ি ভাঙচুর করে। নিহত শরবতের ছেলে সবজু বাবাকে হত্যার অভিযোগে ১১ এপ্রিল শনিবার রাতেই ডালিমকে প্রধান আসামী করে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। রাতেই পুলিশ চেয়ারম্যানর ভাই জুলফিকার জুলি, আব্দুস সালাম বাচ্চুসহ ১০জনকে গ্রেপ্তার করে। জুলি ও বাচ্চুকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ডালিম চেয়ারম্যানের ভাই আহসান হাবিব টগরের উপর হামলা ও চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় চেয়ারম্যানের ভাই ওবায়দুল্লাডহ ডাবলু বাদি হয়ে থানায় পৃথক দু’টি মামলা করেন। মামলা দু’টিতে শরবতের ছেলে সবুজ, শিমুল ও কয়েকজন সাক্ষীকে অসামী করা হয়। অসামী করা হয়েছে ডালিমের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দায়রকত কয়কটি মামলার বাদিদরকও। এ ছাড়াও এক মুক্তিযোদ্ধা নুরল শেখের স্ত্রী জামলা বাদি হয়ে তার বাড়ি ঘরে ভাঙচুরের ঘটনায় আরো একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলায় ডালিম নিজেকে বাঁচাতে প্রভাব খাটিয়ে গত ৮ মে আশাশুনি থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নিয়ে যায়। এরপরও শেষ রক্ষা হলো না। সাড়ে পাঁচ মাস পর পুলিশ টুম্পা ধর্ষণ ও পুড়িয় হত্যা মামলা, ডাকাইত, চাঁদাবাজি, চুরি ও এক মহিলা ইউপি সদস্যকে ধর্ষণের চেষ্টা, ২০১৯ সালের ২২ মার্চ খাজরা ইউনিয়নের ফটিকখালি গ্রামের উপজেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুজন সানাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রৈপ্তারি পরোয়ানার আসামীসহ কমপক্ষে এক ডজন মামলার আসামী উপজেলা আওয়ামী লীগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানেওয়াজ ডালিমকে ঢাকার খিলখেত থানা এলাকা থেকে গ্রপ্তার করে।
আদালত ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’ গ্রপের সংঘর্ষ শরবৎ হত্যা, উভয়পক্ষর ১০ জন আহত ও কমপক্ষ ১০টি বাড়িত ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১৩৮ জন আসামী হলেও এ পর্যন্ত ১৭জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যা মামলার আসামী সিরাজুল ইসলাম, আহসান হাবিব টগর, ইউপি সদস্য অনুপ সানা, ইউপি সদস্য রামপদ সানাসহ ছয়জন এখনো পলাতক রয়েছেন। আদালতে আত্মসমর্পন করে জেল হাজতে রয়েছেন মোস্তাকিম(১), মোস্তাকিম(২), আনারুল ইসলাম, সেলিম হোসেন, আব্দুস সালাম, নুরজ্জামান ওরফ ছোট নুনু।
জানতে চাইলে মামলার সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াছিন আলম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা শরবৎ হত্যা মামলার আসামী শাহানেওয়াজ ডালিমকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাকে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।