জমি দখলকে কেন্দ্র করে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় পরান সরদার ও বদু সরদারের লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য মাদার গাজী ও বুধ গাজীর হাতে প্রান হারান সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের অন্তাখালি মুণ্ডাপাড়ার বাঁশিরাম মুণ্ডা ও তার ছোট ছেলে হেমেন্দ্র মুণ্ডা। গ্রেপ্তারি এড়াতে পরান সরদার ও বদু সরদারের পরিবার ভারতে চলে যায়। এরপরও ধুমঘাট মৌজার ১১ ও ১২ দাগের ৩০ বিঘা জমি বন্ধক নেওয়া ফকির মণ্ডলের জমি তার ছেলে মহাদেব মণ্ডল ও শুকচাদ মণ্ডলের নামে রেকর্ড হয়। বাকী ১৫ বিঘা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফকির মণ্ডলের জমি পাতড়াখোলার সামছুর মোড়লের তিন ছেলে রশিদ, বাবলু ও মাসুদ তিন বিঘা দখল করে। সাড়ে ৬ বিঘা দখল করে মোকছেদ ও তার ছেলেরা। ওই দুই দাগের মুল্লুক চাদের ৩০ বিঘা জমির মধ্যে ২০ বিঘা বেআইনিভাবে অন্যরা ভোগদখল করলেও বাকি ১০ বিঘা দখলে নেই মুল্লুক চাদ মুণ্ডার ওয়ারেশদের।
শুক্রবার সকাল ১১টায় শ্যামনগরের ধুমঘাট অন্তাখালি মুণ্ডাপাড়ায় ঢাকা আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্ব্হাী পরিচালক নূর খান লিটন, এইচআরডিএফ সমন্বয়কারি আবু আহম্মদ ফয়জুল কবির, হাসিবুল হাসান সূর্য, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, এইচআরডিএফ এর সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত ও বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের যুব কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোদ্বীপ মণ্ডলের উপস্থিতিতে এসব কথা তুলে ধরেন স্থানীয় আদিবাসী মুণ্ডা সুরক্ষা কমিটির আহবায়ক শ্রীরাম চন্দ্র মুণ্ডা, যাদব মুণ্ডা, গোপাল মুণ্ডা, নিহত নরেন্দ্র নাথ মুণ্ডার ছেলে সনাতন মুণ্ডা, ফণীন্দ্রনাথ মুণ্ডা প্রমুখ।
মুণ্ডা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ধুমঘাট মৌজার ৯,১০,১৩ ও ১৪ দাগের ২৭ বিঘা জমির মধ্যে ২০ বিঘা জমি তারা ২০১৭ সালে খাজনা দিয়েছেন। চারটি দাগের মধ্যে ১৪ দাগে রাশেদুল ও তার ভাই এবাদুল জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে আট বিঘা জমি দাবি করে আসছিল। রাশেদুল ও এবাদুল আদালত থেকে ডিক্রী পাওয়ার পর নরেন্দ্র নাথ মুণ্ডা ২০১৭ সালে ডিক্রী রদের মামলা করলে ঘুম হারাম হয়ে যায় রাশেদুল ও এবাদুলের। আর্থিক সুবিধা নিয়ে শ্যামনগরের তৎকালিন সহকারি ভূমি কমিশনার শেখ আব্দুল্লাহ সাঈদ আদালতে জমির মালিকানা সংক্রান্ত মিথ্যা প্রতিবেদন দেন। এ প্রতিবেদনকে পুজি করে ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. শুকুর আলী রাশেদুল ও এবাদুলের পক্ষ নেন।
মুণ্ডাদের জমি নেই উল্লেখ করে গত ১৯ আগষ্ট শুকুর আলী ওই ৮ বিঘা জমি জবরদখলের নেতৃত্ব দেন। মুণ্ডা পরিবারের তিন নারী ও নরেন্দ্রনাথ মুণ্ডার উপর হামলার নেপথ্য নায়কও তিনি। হামলার দুই সপ্তাহেও স্থানীয় সাংসদ এসএম জগলুল হায়দার, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম ফজলুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অনেকেই হামলাকারিদের গ্রেপ্তারে বাধা দিচ্ছেন। ফলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রিপন মল্লিক আসামী গ্রেপ্তারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন না। মামলার তদন্তভার অন্য কোন আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।
স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানান, শুধু শুকুর আলী নন, তার ভাই গোলাম মোস্তফা বাংলা ভাই, ভাইপো জাহিদসহ একটি ভাড়াটিয়া গোষ্ঠী বংশীপুরের প্রাদার্স ক্লাব ও মুন স্টার ক্লাবের সদস্যদের অধিকাংশই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মুণ্ডাদের জমি দখল করতে যান। তারা এ নিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেছিল বলে জানান।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, মুণ্ডা সম্প্রদায়ের উপর হামলাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। একইসাথে তাদের সম্পত্তি রক্ষায় আইনগত বিষয়গুলো দেখবেন।