“ ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষন ও বিকাশে আদিবাসি নারীর ভ্থমিকা” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরাতে ১০ আগষ্ট বুধবার সকাল ১০টায় আদিবাসি জনগোষ্ঠির অংশগ্রহনে বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আদিবাসী স্বীকৃতি সহ সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আদিবাসী দিবসে বিভিন্ন দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরে ম্যানগ্রোভ সভাকক্ষে উন্নয়ন সংগঠন স্বদেশ,এডাব, হেড,টিআইবি,সনাক সাতক্ষীরা, সিডো, সুন্দরবন ফাউন্ডেশন,আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশন, সিএসও এইচআরডি কোয়ালিশন, এএলআরডি, পদ্মলোককেন্দ্র,প্রগতি সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন ও আদিবাসী মুন্ডা মাহাতো জনগোষ্ঠী।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, গোবিন্দ মুন্ডা,পুজা মুন্ডা, বিশ্বজিত মুন্ডা, নরেন্দ্র মহাতো প্রমুখ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শেখ শহিদুর রহমান। বিশেষ অতিথি শিক্ষাবিদ আব্দুল হামিদ,কল্যান ব্যানার্জি, শ্যামল বিশ্বাস, প্রভাসক ইদ্রিস আলী, আবুল কালাম আজাদ, রানা গাইন,রবিউল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন এনসিআইপি সাতক্ষীরা সভাপতি হরেকৃষ্ন মুন্ডা, অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন শেখ আফজাল হোসেন সাধারন সম্পাদক আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশন সাতক্ষীরা।
বক্তারা বলেন, সরকারের ঘোষিত নানা কর্মসুচি আদিবাসি ও ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠির অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখছে, তার পরও বর্তমানে তারা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। তাদের সবচেয়ে বড় এবং কষ্টকর সমস্যা হচ্ছে এক সময় তারা প্রচুর জমি-জমার মালিক হলেও তাদের ছেলে-মেয়ে বসবাস করার জায়গা নেই। ভুমিকে তারা পবিত্র বলে মনে করতেন। তাই কোনদিন জমি দখলের জন্য দলিল করা প্রয়োজন একথা ভাবেনি।
অন্যদিকে রয়েছে শিক্ষার সমস্যা। মুন্ডা বলে তাদের ছেলে-মেয়েদের অনেক সময় স্কুল থেকে নাম কেটে দেয়। ফলে ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। নেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। সভ্যতার উচ্চ শিখরে পদার্পণ করেও তারা মুন্ডা বলে হাসপাতেল তাদেরকে যথাযথ চিকিৎসা দেন না সভ্য সমাজের মানুষেরা। মুন্ডাদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার। তাদের কম মজুরি দিলে তারা কোন প্রতিবাদ করে না। ভয়ে তারা বেশি টাকা চাইতে পারে না। এক কথায় রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে প্রধান ৫টি মৌলিক অধিকার থেকেই তারা বঞ্চিত। অভাব তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে পূজা পার্বণ, আনন্দ অথচ তাদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। তাদের সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২২-এ আমাদের ১৩ দফা দাবীসমূহঃ
১. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটা ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. আদিবাসীদের ভূমি বিষয়ক রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৭ ধারা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. আদিবাসীদের জীবনধারাকে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মতামত নেয়া।
৫.আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যতার সাথে যথাযথ সঙ্গতি রেখে উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করা।
৬. আদিবাসী নারী, শিশু ও তরুণদের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবধর্মী কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৭. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত যাবতীয় সুযোগ ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
৮. আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে উপজেলা ভিত্তিক আদিবাসী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা।
৯. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারসহ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান।
১০. আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের কোটাভিত্তিক নিয়োগ শতভাগ নিশ্চিত করা।
১১. আদিবাসীদের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন।
১২. পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ আইএলও কনভেনশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন।
১৩. আদিবাসীদের জন্য ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।