পদ্মা সেতু চালু হলে অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরায়। আম, মাছ ও সবজি বহনে এ সেতু পালন করবে যুগান্তকারী ভূমিকা। ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। এছাড়া সুন্দরবন পর্যটনে ব্যাপক জনসমাগমের আশা সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,জেলায় ৫ হাজারেরও বেশি বাগানে বানিজ্যিকভাবে আম চাষ হয়। খেতে সুস্বাদু ও আগে পেঁকে যায় বলে দেশ-বিদেশে এর চাহিদা প্রচুর। জেলায় এবার ৩৫ হাজার মে.টন আম উৎপাদিত হয়েছে। ১০০ মে. টন আম বিদেশে রপ্তানীও হয়েছে।
তবে আম বানিজ্যের প্রধান বাঁধা আরিচা ফেরিঘাট। সাতক্ষীরার আম ঢাকায় পৌছাতে পৌছাতে পচে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চড়ামুল্যে আম বহন করে পরিবহন সার্ভিসগুলো।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, জেলায় উদ্বৃত্ত সবজি উৎপাদন হয়। এছাড়া এখানকার আমের খ্যাতি দেশ-বিদেশজোড়া। কিন্তু ঢাকায় কাচা পৌছাতে ২ থেকে ৩ দিন দেরি হওয়ায় কাচামাল ব্যবসায়ে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। পদ্মা সেতু চালু হলে পরিবহন খরচও কমবে । পাশাপাশি মাত্র কয়েকঘন্টায় আমরা ঢাকার বাজার ধরতে পারব।
মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা সাতক্ষীরা। মাছ পরিবহনে ফেরীঘাটে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হতো ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতু দিয়ে সহজে মাছ বহন করতে পারার সুবিধা পাবে সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীরা।
সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় শুধু ৫৫ হাজার ঘেরে বাগদা চাষ হয়। ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদা উৎপাদন হয় ৩২ হাজার মে.টন। আর গলদা, হরিণাসহ সাদা মাছের উৎপাদন প্রায় ১ লাখ মে.টন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার বিশিষ্ঠ মৎস্য চাষি বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে মাছ চাষ ও বহনে যুগান্তকারী পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে কক্সবাজার থেকে যে রেনু আসে,তা ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘেরে ছাড়া সম্ভব হবে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে ভোমরা স্থলবন্দরে নতুন করে ব্যবসা-বানিজ্যে গতি ফিরে আসার আশা জেগেছে। বিশেষ করে কোলকাতা থেকে ভোমরার দূরত্ব মাত্র ৬০ কি.মি. হওয়াতে সম্ভাবনার নতুন স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ।
এ ব্যাপারে ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, আরিচা ঘাট পার হওয়ার বিড়ম্বনায় ঢাকার পেঁয়াজ ও মাছ ব্যবসায়ীরা ভোমরা স্থলবন্দরে আসতেননা । এখন থেকে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে মনে করেন ভোমরা স্থলবন্দরের এই ব্যবসায়ী।
তিনি আরও জানান, ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের টার্গেট প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিবছরই টার্গেট ঘাটতি থাকছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে এ ঘাটতি আর থাকবেনা বলে আশা করেন তিনি।
স্থলপথে সুন্দরবন-সাতক্ষীরার আকর্ষণ, এটি সুন্দরবনে পর্যটন আকৃষ্ট করার সরকারি একটি শ্লোগান। তবে যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকার জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে বাইরে থেকে তেমন কেউ আসেননা।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের উর্দ্ধতন সহ-সভাপতি এহসান বাহার বুলবুল জানান, পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে সাতক্ষীরায় আম ও মাছ ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনেও পর্যটক বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার দূরত্ব কমে যাবে কমপক্ষে ১০০ কি.মি.। সাথে দূর হবে ফেরী পারাপারের বিড়ম্বনা।