পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমারের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার সকালে তালা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মশিয়ারের বড় ভাই বারুইহাটী গ্রামের মৃতঃ নূরআলী সরদারের পুত্র সরদার গোলজার হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে সরদার গোলজার হোসেন বলেন, তার ছোট ভাই তালা উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমান উপজেলার জেয়ালা নলতা গ্রামের সন্নিকটে নলবুনিয়া বিলে ১২০ বিঘা জমিতে একটি মাছের ঘের পরিচালনা করে আসছে। উক্ত লীজ ঘেরে বিগত ১৭ আগষ্ট দিবাগত রাতে জেয়ালা নলতা গ্রামের নিকারী পাড়ার লুৎফর রহমান নিকারীর পুত্র সেলিম নিকারীসহ ১০/১২ জন একসাথে মিলে মাছ লুট করার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ঘেরে মাছ ধরতে থাকে। একপর্যায়ে ঘেরের পার্শ্ববর্তী বাসার পাহারাদাররা জানতে পেরে ডাক চিৎকার করতে থাকলে তারা অস্ত্রাদি প্রদর্শন করে উক্ত ঘের হতে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যাদি ও ঘেরের মেইন বাসা হতে অন্যান্য মালামালসহ নগদ টাকা নিয়ে চলে যায়।
এদিকে সেলিম নিকারী উক্ত ঘেরে মাছ লুট করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এমন খবর শুনে তার পিতা লুৎফর রহমান নিকারী ঐ রাতে হন্তদন্ত হয়ে ঘেরের দিকে আসার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাস্তার উপর পড়ে যান। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। যতদূর জানা যায়, মৃত লুৎফর রহমানের হার্টের অসুখ ছিল এবং নিয়মিত হার্টের ওষুধ গ্রহণ করতেন।
অপরদিকে লুৎফর নিকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সংবাদ পেয়ে আমার ছোট ভাই মশিয়ার রহমান জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে যে লুৎফর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। অথচ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগণ ষড়যন্ত্রমুলকভাবে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াটি কাহিনী সৃষ্টি করে লুৎফর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সরদার মশিয়ার রহমানসহ ৩জনকে আসামী শ্রেনীভুক্ত করে তালা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। উক্ত মামলায় আমার ছেঅট ভাই সরদার মশিয়ার রহমান গ্রেফতার হয়ে জেল-হাজতে আছে। তবে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের ভাষ্য মতে, মৃতঃ লুৎফর রহমান নিকারীর শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, তাকে কেউ হত্যা করে নাই।
এদিকে উক্ত দুর্ঘটনা ও আবেগকে পুঁজি করে কতিপয় ব্যক্তি আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তারা সরদার মশিয়ারের সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিগত দিনের নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ। সম্প্রতি তাদের দেয়া স্মারকলিপিতে রাজনৈতিক নোংরামী প্রতিফলিত হয়েছে। তারা ক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে উস্কানি দিচ্ছেন, যার ফলে প্রতিহিংসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তারা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে তদন্ত কাজে বাধা ও বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়ার পায়তারা করছে চক্রটি। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের অপরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, সরদার মশিয়ার রহমান বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এ সময় সাতক্ষীরায় ডেকে নিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। হাসপাতালে বেশ কিছুদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সে। পরবর্তীতে তালাবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থণে মশিয়ার বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তাছাড়া আজকের এই সম্মেলনে উপস্থিত আছেন আমার আরেক ছোটভাই তালা সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন। তিনিও বিগত নির্বাচনে ব্যাপক জন সমর্থণ পেয়ে নির্বাচিত হন। তার সাথে নির্বাচনে যারা ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন তারাই এখন সরদার মশিয়ারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ষড়যন্ত্রকারীদের কুটকৌশলে জাকির হোসেনকেও এক সময় আটক করে নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
এলাকাবাসীর ব্যাপক সমর্থণ ও দোয়ার কারণে সে সময় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তার সাথে নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ বিভিন্নভাবে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে একটি চক্র শ্রেণি-শত্রু খতমের নামে তালা থানার বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক মানুষকে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় তার দাদা ও বড় চাচাকে হত্যা করা হয়। তখনকার ঐ হত্যাকারী চক্রের উত্তরসূরীরা সেই শত্রুতার পরম্পরা বজায় রেখেছে এবং তাদের অনুসারীরাই সরদার মশিয়ারের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে। তাদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আমাদের পরিবার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অনুসারী অথচ আমাদের প্রতিপক্ষ তাতে বিশ্বাসী নয়।
তিনি বলেন, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তবে কিসের জন্য এই উস্কানিমূলক আচরণ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার আগেই কেন এই দোষারোপ। এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক নিরপেক্ষ মানুষকে জড়িয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। শুধুমাত্র আমাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে তাদেরকে এ ঘটনার সাথে জড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কয়েকজন নেতা নামধারী ব্যক্তি অহেতুক সকলকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস করছেন। তাদের এই অপচেষ্টার বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকে উক্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত তারা। এ সময় তিনি শুধু রাজনৈতিক কারণে বিরোধীতার জন্যে বিরোধীতা না করে নিরপক্ষে তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উদঘাটন করার দাবী জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া যে সকল ব্যক্তিবর্গ শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের পরিবারের মানসম্মান নষ্ট করছে তাদের অহেতুক উত্তেজনা ও অশান্তি সৃষ্টি না করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহবান জানান তিনি।