মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি চাকুরি করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সস্মেলন করেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শার্শা গ্রামের মৃত ফকির আহম্মেদ গাজীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ধানদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের প্রয়াত ললিতমোহন সাহা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এমন জাল কাগজপত্র তৈরির মাধমে তার পরিবারের তিন সদস্য বীরেন্দ্রনাথ সাহা, প্রতাপ সাহা ও সুমন সাহা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকুরি পেয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি জজ কোর্টে ক্রিমিনিাল রিভিশন মামলা করেছেন। ১৪৮৬০ নং সনদ নাম্বার প্রদর্শন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বীরেন্দ্র নাথ সাহা, প্রতাপ কুমার সাহা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে সুমন সাহা যে চাকুরি করে আসছেন তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও মোটা অংকের টাকা খরচ করে ওই অমুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন ।
সংবাদ সস্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, অমুক্তিযোদ্ধা ললিত মোহন সাহাকে তালিকাভুক্তির জন্য মোটা অংকের অর্থের প্রলোভনে কতিপয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষী দিচ্ছেন এবং স্বাক্ষীগুলোর সঠিকতা যাচাই-বাছাই কমিটি যথাযথ নীতিমালা অনুসরন করছেন না। উক্ত যাঁচাই বাছাই কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এই অমুক্তিযোদ্ধার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানসহ মূল কমিটির উপরে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ললিত মোহন সাহার পক্ষে যাঁচাই বাছাই কমিটিতে সাক্ষ্য প্রদানকারি তালার ঘোষনগরের মুক্তিযোদ্ধা অমল কুমার ঘোষ, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডের ডেপুটি কমাণ্ডার শফিক আহম্মেদ, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার খড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক সানা জানান, তারা বাস্তবতার ভিত্তিতে ললিত মোহন সাহাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁচাই বাছাই কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খুলনার রহমতুল্লাহ দাদু ২০১০ সালে ললিত মোহন সাহার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়েছে। সদরের বলাডাঙার বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল হোসেনের লেখা মুক্তিযুদ্ধের সাতক্ষীরা বই এর ৬৪ পাতায় তবিবুর রহমানের বড় ভাই মতিয়ার রহমানকে রাজাকার হিসেবে সাত নং তালিক্য়া নাম থাকলেও অসদুপায়ে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বাাননোর চেষ্টা চলছে।
মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি ঘোষ, নূর আলী সরদার ও আব্দুস সাত্তার জানান, অনিয়ম ও দূর্ণীতির দায়ে জেরবার হওয়া তবিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের জন্য তারা গত ২২ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের প্রতাপ সাহা জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দক্ষিণ শার্শার তবিবুর রহমান নিজেই ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই ও ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ললিত মোহন সাহা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মর্মে দুইবার প্রত্যয়ন দিয়েছেন। এজন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নাম করে ললিত মোহনের ছেলেদের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদেরকে বিপাকে ফেলে বারবার টাকা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তবিবুর রহমান। যাচাই বাছাই কমিটিতে যাতে তার বাবার বিপক্ষে প্রতিবেদন দেন সেজন্য তবিবুর রহমান তড়িঘড়ি করে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর আদালতে সনদ জালিয়াতির মামলা করে হেরে হেছেন। মামলা তুলে নিতে এফিডেফিড করতে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছেন তবিুবর রহমান।
এরপরও তিনি আদালতের কাঠগোড়ায় উঠে মামলা না তোলার জন্য বললেও পিবিআই প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিচারক ওই মামলা খারিজ করে দেন। খারিজ আদেশে বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এক্তিয়ার এবং বাদির মামলা করার সূযোগ নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতাপ সাহা আরো বলেন, তবিবুর রহমান তার নিজের মেয়ে ফারজানা ইসলামের সহপাঠি কালিগঞ্জের চম্পাফুলের মল্লিকা সরকারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আনছার ভিডিপির ভূযা সনদ যোগাড় করে দিয়ে ২০০২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করার সহযোগাগিতা করলেও তদন্তে জাল প্রমালিত হওয়ায় মল্লিকার চাকুরি চলে যায়। তবে ২০১০ সালে মল্লিকা আবারো একইপদে কালিগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। দক্ষিণ শার্শা দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে একই গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে বেলালকে কম্পিউটর অপারেটর কাম করণিক পদে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সাড়ে চার লাখ টাকা নেন তবিবুর রহমান। তাকে বাদ দিয়ে খালেক শেখের ছেলে মিলনের কাছ থেকে আরো বেশি টাকা নিয়ে তাকে চাকুরি দিতে গেলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। সানতলা গ্রামের মারুফাকে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন, একজন ডাক্তার, ওয়ার্ডমাষ্টারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে আসামীদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে বাদিকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেন তবিবুর রহমান।
তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ সম্পর্কে তবিবুর রহমান বলেন, ললিত মোহন সাহার ছেলেরা নিজেদের ত্র“টি ঢাকতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তিনি টাকা নিয়েছেন এমন কোন প্রমাণ সাহা পরিবারের সদস্যদের কাছে নেই।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাই কমিটির তালা শাখার সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার জানান, তারা বর্তমান সরকারের সর্বশেষ প্রজ্ঝাপন মেনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ তাদের কার্যক্রম অনৈতিকভাবে চলছে এটা বলার এক্তিয়ার তবিবুর রহমানের নেই।
সংবাদ সস্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মশিউর রহমান মশু, ধানদিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের, মুক্তিযোদ্ধা নেছার আলী, তবিবুর রহমানের জামাতা শফিকুল ইসলাম ও ছেলে আবু সাঈদ মোঃ তুহীন।