কোচিং না করায় ও পরীক্ষায় পাশ করতে অবৈধ সুযোগের জন্য টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এক শিক্ষার্থীকে কক্ষ থেকে ধরে এনে ঘরের মধ্যে আটক রেখে হাত ও পা বেঁধে লোহার রড ও জিআই পাইপ দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের একপর্যায়ে একটি জিআই পাইপ ভেঙে যায়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে এ ঘটনা ঘটে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
অহত শিক্ষার্থীর নাম সালমান হোসেন (২২)। সে পটুয়াখালি জেলার বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের মোঃ হানিফের ছেলে ও নলতার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ল্যাবেরোটরি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
নলতার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ল্যাবেরোটরি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রিপন জানান, তিনি প্রতিষ্ঠানের তিন তলার ৩১৩ নং কক্ষ ও সহপাঠি সালমান তিনতলার ৭ নং রুমে থাকেন। কালিগঞ্জ উপজেলার সাঈদী হাসান খণ্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। শিক্ষক সাঈদী হাসান ও মেডিকেল এসিসট্যান্ট ট্রেণিং স্কুলের এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কুষ্ঠিয়া জেলা সদরের রানা সামনে ঘোড়াপোতা মোড়ের জনৈক শহীদুল ইসলামের বাড়ির দোতলা ভাড়া নিয়ে সেখানে কোচিং করে থাকেন। সেখানে যারা পড়তে চায়না বা যারা সাঈদী হাসানের কথামত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা নিয়ে পরীক্ষায় পাশ করতে না চায় তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রারি করে থাকেন ওই শিক্ষক ও তার কোচিং এর কয়েকজন ছাত্রের মাধ্যমে। এ ছাড়া বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী সাঈদী হাসান প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি পছন্দ করেন না।
রিপন আরো জানান, বার বার বলার পরও সালমান কোচিং করতে ও টাকা দিয়ে অসাধু উপায় অবলম্বন করে পরীক্ষায় পাশ করতে রাজী হয়নি । এরই জের ধরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাঈদী হাসান ও রানার কাছের ছাত্র বলে পরিচিত রেডিওলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নায়িব হাসান (কক্ষ নং ৪০৭) ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুর রশিদ পরিকল্পিতভাবে নায়িব হাসানের কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সালমানকে হা ও পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে লোহার রড ও জিআইপাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়।
এ সময় ভেঙে যায় একটি জিআই পাইপ। অবস্থা বেগতিক বুঝে নির্যাতনকারিরা সালমানকে নলতা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তিনি (রিপন) ও কয়েকজন সহপাঠি খবর পেয়ে সালমানকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির পরিচালক ডাঃ ফারুকুজ্জামানকে অবহিত করা হয়। খবর পেয়ে সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুঁটে আসেন সাংসদ ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানতে চাইলে সালমান বলেন, রিপনের মাধ্যমে তার উপর নির্যাতনের কাহিনী জানার অনুরোধ করেন।
সালমানের বাবা মোঃ হানিফ বলেন, ছেলের উপর নির্যাতনের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। বিকেল চারটার মধ্যে তারা সখীপুরে পৌঁছাবেন বলে ধারণা করছেন।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রায়হান আবীর বলেন, সালমানের মাথা, হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পার না হলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিয়ে কিছু বলা যাবে না।
এ ব্যাপারে শনিবার দুপুর একটার দিকে আইএচটি’র শিক্ষার্থী নায়িব হাসানের ০১৯৯৪-২০৭৫০৪ নং মোবাইল ফোন, আব্দুর রশিদের ০১৯৯১-১৫৪২২৯ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। খন্ডকালিন শিক্ষক(অতিথি) সাঈদীর হাসান এর ০১৭৫২-৮৬৮৪৫৬ নং মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নলতার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির পরিচালক ডাঃ ফারুকুজ্জামান শনিবার দুপুর সোয়া একটায় মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান. রাতে তিনি প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না। সালমানের উপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান অফিস সহকারি) আশেক নেওয়াজকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে। ওই কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংসদ ডাঃ আ.ফ,ম রুহুল হক বলেন, সালমান এর উপর নির্যাতনকারিদের গ্রেপ্তারের জন্য ইতিমধ্যে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা শনিবার দুপুরে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্নেক্সে অবস্থান করাকালিন এ প্রতিবেদককে জানান, সালমানের শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ক জখম রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা রেকর্ড করে নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।