শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে চোরাচালানের ভারতীয় গলদা রেনু পোনা আটক করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও চোরাচালানিদের মধ্যে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেছে। ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে চোরাচালানিরা আটক গলদা পোনা ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা বিজিবিকে বহনকারী একটি বেসরকারি মালিকানাধীন প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে বিজিবি দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়ার আশু মার্কেটে এই কান্ড ঘটে। গাড়িটি কুলিয়া ব্রীজের মাথায় প্রধান সড়কের ওপর জ্বালিয়ছ দেওয়া হয়।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বিজিবির একটি দল আশু মার্কেটে তাদের মাছের ডিপোতে মধ্যরাতে অভিযান চালায়। এ সময় বিপুল পরিমান গলদা রেনু পোনা আটক করে। তারা বলেন আমরা সরকারকে ইজারার টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। আমাদের যথাযথ লাইসেন্স আছে। বৈধভাবে মাছ কেনাবেচা করি। বিজিবি হানা দিলে আমরা প্রতিবাদ করি। এসময় বিজিবি আমাদের মাছ ব্যবসায়ী আবু সাঈদকে পিটিয়ে আহত করে। তাকে প্রথমে সখিপুর হাসপাতালে ও পরে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গ্রামবাসী মিলে আটক পোনা বিজিবির কাছ থেকে কেড়ে নেয়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও গাড়িতে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা বলতে পারি না।
স্থানীয়রা জানান, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা চিংড়ী পোনার একটি বহরের পিছু ধাওয়া করেছিল বিজিবি সদস্যরা। চোরাচালানীরা এই পোনা দ্রুততার সাথে আশু মার্কেটের মাছ ডিপোতে নিয়ে যায়। এরপরেই তা আটকের ঘটনা ঘটে।
দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবাইদুল্লাহ্ জানান, খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছান। ততক্ষনে সংঘর্ষ থেমে গেছে। তিনি গাড়িতে আগুন দেখেছেন। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি।
কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক জানান চিংড়ি পোনা ধরাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। রাতে আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত হই। তিনি বলেন, বিজিবির হামলায় আবু সাঈদ নামের এক দোকানী গুরুতর আহত হয়েছেন। এলাকাবাসী জানান বিজিরি নায়েক মিজানের নেতৃত্বে এই পোনা আটকের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ করে তারা বলেন, ভারতীয় পোনা আনার সময় বিজিবির কিছু সদস্য তাদের কাছ থেকে গোপনে টাকা নেয়। আবার ডিপোতে নিয়ে এলে পোনা ধরার নামে আমাদের কাছে টাকা চায়। এমনকি রাস্তায় বহনকালেও বিজিবির কিছু অসাধু সদস্য টাকাপয়সা আদায় করে থাকে।
বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্ণেল আল মাহমুদ জানান, চোরাচালানের ভারতীয় গলদা রেনু পোনা আটকের পরই সংঘবদ্ধ চোরাচালানীরা গ্রামবাসীর সহায়তায় বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা করে। তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমন অবস্থায় বিজিবি আত্মরক্ষার্থে ২ রাউন্ড ফাকা গুলি করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে থাকে। অবশেষে চোরাচালানীরা হামলা করে বিজিবির আটককৃত গলদা রেণু পোনা ছিনিয়ে নেয়। এরপরই বিজিবির ব্যবহৃত গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিজিবি অধিনায়ক আরও জানান, পরে বিকল্প ব্যবস্থায় আমরা বিজিবি সদস্যদের উদ্ধার করে আনি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।