সাতক্ষীরায় বে-সরকারী সংস্থা অগ্রগতির আয়োজনে মঙ্গলবার দুপুরে প্রাকটিক্যাল ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টারে অনলাইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আইসিটি আইন ২০০৬, পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ যথাযথ প্রয়োগের জন্য ” জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অত্র অনূষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন অগ্রগতি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সবুর বিশ্বাস।অত্র অনুষ্ঠানে জেলা শিশু কল্যান বোর্ডের সম্মানিত সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে পুলক কুমার চক্রবর্তী, অধ্যাপক আব্দুল হামিদ, শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি পরিচালক বাবুল আক্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহ আলম, জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ রফিকুল ইসলাম, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন, সমাজ সেবা কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের শরিফুল ইসলাম, ব্রাকের প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম এবং অনলাইন সংবাদপত্র ভয়েস অব সাতক্ষীরার বার্তা সম্পাদক শাহিদুর রহমান।
এছাড়া ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলালিংকের জোনাল ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সম্মানিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। চোখের সামনে অনলাইনে খুলে যাচ্ছে অনেক অজানা বিস্ময়। একই সঙ্গে বাড়ছে এর অপব্যবহার। অনলাইনে ঝোঁক বাড়ছে শিশুদের। অনলাইনের অনিরাপদ ব্যবহার শিশুদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। যৌন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেক শিশূ।সাইবার অপরাধ বন্ধে ডিজিটাল সাইবার নিরাপত্তা আইন হচ্ছে। এতে পর্নোগ্রাফির শাস্তি ও সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে এর বিচারের জন্য পর্যাপ্ত আদালত নেই। সাইবার অপরাধ বিচারের জন্য মাত্র একটি আদালত আছে। প্রণিতব্য আইনে এর সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সাইবার হয়রানি বিষয়ে অনেকে লজ্জায় আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। অনেকে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয় না। পুলিশ মামলা নিলেও প্রমাণের অভাবে সঠিক বিচার পায় না। এসবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ চিহ্নিতকরণে সমস্যা রয়ে গেছে। এখানে উন্নতি করতে হবে। যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের জেরা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার তুলে ধরতে হবে।
ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার শিখতে হ্যান্ডবুক ছাপানো যেতে পারে। বন্ধ নয়; সচেতনতা ও সমতার মাধ্যমে শিশুর ইন্টারনেটের স্বাভাবিক ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, মাদকাসক্তির মতো ইন্টারনেটে আসক্তি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের সঠিকভাবে শিক্ষিত না করে ইন্টারনেট তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারনেটের নিষিদ্ধ বিষয়গুলো এত সহজলভ্য যে, সহজেই তারা আকৃষ্ট হচ্ছে। এর মাধ্যমে আবার নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। নিজেরাও অন্যদের নির্যাতন করছে। নির্যাতনের শিকাররা সঠিক বিচার পাচ্ছে না। পর্নোতে আসক্ত শিশুরা এর দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিষয়গুলোকে সার্বিকভাবে দেখতে হবে। বাবা-মার ভূমিকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পর্যালোচনা করতে হবে। বর্তমান প্রজন্ম কোনদিকে যাচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার শেখাতে হবে। সাইবার অপরাধের সঠিক বিচার করতে হবে। এসব অপরাধ প্রতিরোধ বিষয়ের কথা চিন্তা করতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির জগতে প্রবেশ করানোর আগে সন্তানকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। অপরের প্রতি সম্মানবোধ শেখাতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। সন্তানের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ন রেখেই তার অনলাইন বিচরণের খোঁজখবর রাখতে হবে। সন্তানকে পর্যাপ্তস্ন সময় দিতে হবে। বাসার প্রযুক্তিপণ্যটি কোনো নির্দিষ্ট রুমে না রেখে একটি কমন জায়গায় রাখতে হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনও শিশুদের নেতিবাচক ধারণা গড়ে তুলছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবারকে সুগঠিত করার পাশাপাশি মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর সহযোগীতায় অত্র সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অগ্রগতি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সবুর বিশ্বাস এবং সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মাসুম বিল্লাহ সোহাগ।
উক্ত সংলাপে মোট ৩০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।