সাতক্ষীরায় বিজিবি কর্তৃক উদ্ধারকৃত বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী বনবিভাগের মাধ্যমে সুন্দরবনে অবমুক্ত করার পর একটি বন্যপ্রাণী (ভোঁদড়) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের বুড়িগঝয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি গ্রামের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামে এক ব্যক্তি এই বন্যপ্রাণি ভোঁদড়কে পিটিয়ে হত্যা করে। পুকুরের মধ্যে জাল ফেলে ঘণ্টা খানেক চেষ্টার পর আটক করা হয় ভোঁদড়টিকে। এরপর নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৪২) বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি গ্রামের মত. কালিপদ বর্মনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ঘের ব্যবসায়ী।
কলবাড়ী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক নুর আলম জানান, এক ঘণ্টারও বেশী সময় ধরে পুকুরে জাল ফেলে ভোঁদড়টি ধরার চেষ্টা করে রবীদ্রনাথ ঠাকুর। এরপর জালে আটকা পড়ে ভোঁদড়টি। পুকুরের উপরে তুলে ভোঁদড়টি নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি। ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তিনি ছেড়ে দেননি। সবার সামনেই পিটিয়ে হত্যা করা হয় ভোঁদড়টিকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ভোঁদড়টির দেহাবশেষ পার্শ্ববর্তী মালঞ্চ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবীদ্রনাথ ঠাকুর ও তার চাচাতো ভাই ঝটু দুইজন মিলে ভোঁদড়টি ধরে হত্যা করেছে। এলাকার অনেকে ছেড়ে দিতে বললেও তারা ছেড়ে দেননি। দুটি ভোঁদড়ের মধ্যে একটি পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আরেকটি এখনো আশেপাশে দেখা যাচ্ছে। রবীদ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির পিছনে একটি মাছের ঘেরের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৬ আগষ্ট) সকালেও একটি ভোঁদড় দেখা গেছে।
ভোঁদড় পিটিয়ে হত্যাকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, আমার পুকুরে নেমে মাছ খাচ্ছিল, ক্ষতি করছিল। সেকারণে পিটিয়ে মেরে ফেলছি।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, অবমুক্ত ভোঁদড় দুটি লোকালয়ে প্রবেশ করে কলবাড়ী গ্রামের একটি পুকুর প্রবেশ করে। পরে সেখানে থেকে জাল দিয়ে ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) আবুল হাসান জানান, বন্যপ্রাণিটি কে মেরেছে সেটি আমরা শনাক্তেরর চেষ্টা করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বিজিবির উদ্ধার করে দেওয়ার পর অবমুক্ত করা ভোঁদড় দুটির মধ্যে একটি হত্যার স্বীকার হয়েছে কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়। কেননা, আমরা দুটি ভোঁদড় সুন্দরবনের মধ্যে অবমুক্ত করছিলাম। সেটি লোকালয়ে কিভাবে আসবে?
উল্লেখ্য, ভারত পাচারকালে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্ত থেকে দুইটি ভোঁদড়, ছয়টি খরগোশ ও একটি ঈগল পাখি উদ্ধার করে ২২ আগষ্ট (রবিবার) বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল মাহমুদ। ওই দিন বিকালে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ফরেস্ট অফিসের বিপরীতে সুন্দরবনের চরে এই বন্যপ্রাণি অবমুক্ত করে বনবিভাগ।