গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ড্রেজার মালিকরা গত ২ বছর ধরে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি সহ বসতঘর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু বলতে গেলে বলে, সরকারী রাস্তা নির্মাণ করছি, এলাকার মানুষকে প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে ২ বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে তারা। এছাড়াও এলাকাবাসী বলেন- এই জমি থেকে আমরা জীবণ- জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তাও নষ্ট করে দিচ্ছে ড্রেজারের লোকজন।
কোটালীপাড়া উপজেলার ঐতিহ্য হচ্ছে আবাদি জমি। এই জমি আবাদ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক মানুষ। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে এই আবাদি জমি।
কান্দির ড্রেজার মালিক সজল রায় ও উজ্জ্বল রায়, নাগরার আবু সাইদ, আমবাড়ীর জাহিদুল ইসলাম মোল্যা, পিঞ্জুরীর শামীম তালুকদার ও বাবু তালুকদার, বড় দক্ষিণপাড়ের ইমরান শেখ, বানারজোড়ের আনিস হাওলাদার, আশুতিয়ার কাজল শেখ, তাড়াইলের বিধান বিশ্বাস সহ অনেকে বলেন, আমাদের ড্রেজার মালিকদের সমিতি আছে, আমরা প্রতি মাসে চাদা দেই ৫ শত টাকা, আমরা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সমিতিতে ভর্তি হই, আর এই দিয়ে সমিতির সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক / কোষাধ্যক্ষ প্রশাসন ম্যানেজ করে নেয়। এলাকাবাসীরা বাঁধা দিলে তাদেরকে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ড্রেজারের লোকজন বলে আমরা সরকারি অনুমতি নিয়ে বালু কাটতে আসছি। এলাকাবাসী বলেন, আমাদের কথা তোয়াক্কা না করে তারা বলে, বালু আমরা রাস্তার কাজে খাটাচ্ছি। এইভাবে দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করতে থাকলে এলাকার ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি সহ একদিন সব বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের দাবি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চিরতরে বন্ধ হোক।
কোটালীপাড়ার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ কৃষক ও বিজ্ঞ মহল সাংবাদিকদের জানান, গ্রামের অধিকাংশ মানুষই গরিব। এই আবাদি জমি থেকে ফসল আবাদ করে আমাদের সংসার চলে। আর এই আবাদি ফসল থেকে প্রভাবশালীরা সব সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। রাধাগঞ্জ ইউপি সদস্য কাকোন মৃধা, নিজেই ৪টি ড্রেজার চালাচ্ছেন কুঞ্জুবনে। বান্ধাবাড়ি ইউপি সদস্য মুকুল হাওলাদার, কুশলা ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ শেখ, হিরন ইউপি সদস্য আবু মুসা, রাধাগঞ্জ ইউপি সদস্য মহানন্দ সহ অনেকেই রাস্তার কাজ দেখিয়েও এখন বর্তমানে দেড় শতাধিক ড্রেজার দিয়ে রাস্তার কাজ ছাড়াও অবৈধ ভাবে বালু বিক্রি করছে। যার ফলে কোটালীপাড়া বিভিন্ন জায়গার ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে ও অনেক ঘরবাড়ি ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বালু উত্তোলন অচিরেই বন্ধ না হয় তাহলে আগামীতে গ্রামের মানুষ বসবাস করতে পারবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার চেয়ারম্যান / মেম্বারা এই আবাদি জমি থেকে গত ২ বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে ও প্রতিদিন ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ টাকার বালু নিয়ে যাচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু তারা চলমান কাজে খাটাচ্ছে ও বাইরে বিক্রি করছে।
কিছু অসাধু সহকারী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ ড্রেজার মালিক সমিতির বালু উত্তোলনের কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নজরে পড়লে সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের জানালে বলেন – দেখছি, কোনো অভিযোগ পাইনি, এভাবেই নিরব থাকেন তারা।
এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সোহেল হাওলাদারের নিজ ব্যবহৃত …. ৫৯৫৫ মুঠোফোনে রোববার বিকাল ৪ টা ৫১ মিনিটে সাংবাদিক পরিচয়ে কল দিয়ে সমিতি গঠন করে বালু উত্তোলনের কোন নিয়ম আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমোচ্ছেন বলে জানিয়ে পরে ফোন দিতে বলেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, কোনো ড্রেজার চলবে না, ড্রেজারের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যদি আপনাদের নজরে পড়ে তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো।