সাতক্ষীরা জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ঈদে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বাড়িতে আসা ও সীমান্তবর্তী জেলা হওয়াতে সংক্রমণের হার বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে করোনা আক্রান্ত ভারত ফেরত বাংলাদেশীদের নমুনা আইডিসিআরে পাঠানো হলেও তার ফলাফল এখনো আসেনি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৩৮ শতাংশ। পরের দিন ২৪ মে এই হার বেড়ে দাড়ায় ৪১ শতাংশে। ২৫ মে আবারো কমে দাড়ায় ৪০ শতাংশে। ২৬ মে সংক্রমণের হার দাড়ায় ৪৬ শতাংশে। ২৭ মে শুন্য থাকার পরে ২৮ মে সংক্রমণের হার দাড়ায় ৪৩ শতাংশে। আর ২৯ মে সংক্রমণের হার কমে দাড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত ঘোষ জানান, ভোমরা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ ট্রাক বাংলাদেশে ঢোকে। প্রতি ট্রাকে ২ জন করে হলেও ৪০০ থেকে ৬০০ জন ভারতীয় ব্যক্তি বাংলাদেশে ঢুকছে। থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাদের পরীক্ষা করা হলেও নিশ্চিত হওয়া যায়না যে, তারা করোনা ভাইরাস বহন করছেন না।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ভারত ফেরত দু’শতাধিক ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে সাতক্ষীরার আবাসিক হোটেলে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। শুধু তাই নয়,অবৈধভাবে প্রচুর বাংলাদেশী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জনশ্র“তি আছে।
তবে এ বিষয়ে ৩৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আল মাহমুদ জানান, সীমান্তে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের কোন খবর তার জানা নেই।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসেইন শাফায়েত জানান, ঈদের আগে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১৩ শতাংশ। ইদানিং তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশে পৌছেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় করোনা স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো: হুসাইন শাফায়াত আরও জানান, সাতক্ষীরা জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনার বিকল্প নেই। এছাড়া রোগীর চাপ সামলাতে প্রয়োজনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রুপান্তর করতে হবে।
এসময় তিনি বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ১০০টি ছিটের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০০টি সিটের বিপরীতে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে ১১০জন ব্যক্তি। বেডের চেয়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনায় আক্রান্ত সাতজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অন্যরা করোনায় চিকিৎসাসেবায় বেড না পেয়ে জেলার প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন. জেলায় এপর্যন্ত ৯ হাজার ২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫৪৭ জন। আর করোনায় মারা গেছেন ৪৬ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২০৯ জন।
প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভারতের ঘটনা দেখে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকার নেপালি ভূখণ্ডে সম্প্রতি সংক্রমণ অনেক বেশি হয়েছে এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এসময় তিনি করোনার সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে সবাইকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান।