সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার সদ্য বিদায়ী অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হুসেন এর যোগদানের পর থেকে কর্মময় জীবনের সাফল্যর লেখাটি কালিগঞ্জ পিএস নামে ফেসবুক পেজ থেকে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশটাইমস deshtimes24.news এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রিয় কালিগঞ্জবাসী,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন।
আমি গত ১১/০৯/২০১৯ ইং তারিখে আপনাদের কালিগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি অত্র থানার আইন শৃংভ্খলা নিয়ন্ত্রন ও অপরাধ নিমূর্লে আপনাদের কাছ থেকে অকৃত্রিম সহযোগিতা পেয়েছি। আপনারা পাশে ছিলেন বলেই কালিগঞ্জকে দূর্নীতি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তির সব বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবার সাহস ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। কালিগঞ্জ থানায় কর্মরত থাকাকালে অত্র এলাকার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন ও বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করতে সক্ষম হয়েছি। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে পুরো কালিগঞ্জকে ১২টি ইউনিয়নে পুলিশের নজরদারী বৃদ্ধির লক্ষে ০৫নং কুশুলিয়া ইউনিয়ন ও ০৬নং নলতা ইউনিয়নে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি, অন্যান্য ইউনিয়নেও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা, দলীয় নেতৃবৃন্দ, চেয়ারম্যান, মেম্বার, সংবাদকর্মী, জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তি, হিন্দু সম্প্রদায় সহ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডার ইমাম, মোয়াজ্জিন, পুরোহিত ও সর্বস্তরের সাধারন জনগনকে নিয়ে অপরাধ নির্মূল ও প্রতিরোধে প্রতিমাসে কল্যান ও প্রীতি সভার আয়োজন করেছি। বিশেষ করে যে জ্ঞানী মানুষগুলি আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন ১। মাননীয় সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক(সাতক্ষীরা-৩), সভাপতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ও সভাপতি, নলতা কেন্দ্রিয় আহছানিয়া মিশন, নলতা, কালিগঞ্জ সাতক্ষীরা, ২। মাননীয় সাংসদ এস এম জগলুল হায়দার(সাতক্ষীরা-৪), ৩। মাননীয় রেঞ্জ ডিআইজি ও খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অভিভাবক, সৎ, সদালাপী, মানবিক এবং পুলিশের ক্লিন ইমেজের প্রিয় স্যার জনাব ড. খঃ মহিদ উদ্দিন, বিপিএম-বার এবং সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের অভিভাবক, শ্রদ্ধাভাজন, মানবিক, সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম-বার স্যার সহ কালিগঞ্জ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি যথাযথ সম্মান জ্ঞাপন করছি। প্রতিটি ভুক্তভোগী মানুষ যেন বিনা খরচে মামলা দায়ের, জিডি ও অভিযোগ করতে পারে সর্বদা এ ব্যাপারে সজাগ ও তৎপর থেকেছি এবং আইনগত সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করেছি। অত্র থানায় আমার যোগদানের তারিখে থানা এলাকার বিবিধ বিষয় নিয়ে গনমাধ্যমকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেছি। অত্র থানায় কর্মরত প্রতিটি পুলিশ সদস্য ও পরিবারের সুবিধা-অসুবিধা, খোঁজ খবর নিয়ে তাদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে সদা সচেষ্ট থেকেছি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তাহার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশীদারিত্বের নিরিখে শতভাগ জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন একটি মানবিক থানা গড়তে যোগদানের পর থেকেই আমি ছিলাম সচেষ্ট। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বুলবুল ও আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাড়িয়েছি এবং কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস ১ম এবং ২য় ধাপ মোকাবেলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে সরকারী নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করেছি। এই দেড় বছরে আপনাদের কাছে আমি যে সহযোগিতা ও ভালবাসা পেয়েছি তা আমার স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে থাকবে। চাকুরী জীবনে বদলীর বিষয়টি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বদলীজনীত কারণে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে হচ্ছে কিন্তু বিদায় বেলায় বারবার চোখদুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠছে। আমার নিজের হাতে গড়া এই বৃক্ষরাজি, ফুল-ফল-সবজি, মাছ, রান্নাঘর, কনফারেন্স কাম ডাইনিং, পুলিশ সুপার হতে তদুর্ধ্বদের থাকার মান সম্মত আবাসন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এএসপি(প্রবিঃ), পিএসআই দের থাকার আবাসন/কোয়ার্টার, থানা ভবন, ওয়াক-ওয়ে, আগন্তুকদের টয়লেট-প্রসাবখানা, গ্যারেজ, ব্যারাকে লাইট-টেলিভিশন, অফিসার ফোর্সের ব্যারাকে সুযোগ সুবিধা প্রদান, ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ, অফিসার ইনচার্জের বাসভবন, পুলিশ পরিদর্শ(তদন্ত) এর বাসভবনের স্থায়ী আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করা সহ শোভিত-পরিচ্ছন্ন-নির্মল থানা চত্বর, সকল গাছের গোড়ায় শোভাবর্ধনের জন্য রং করা সহ নানাবিধ কাজগুলো দৃশ্যমান। প্রিয় সহকর্মী, ভালবাসার কালীগঞ্জবাসী, সবাইকে ছেড়ে যেতে, হৃদয়টা ভীষন ব্যথায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। পুলিশের সাথে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের স্বার্থে কারো সাথে হয়তো অনেক সময় বিরূপ আচরন করতে হয়েছে কিংবা অনেকের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হয়েছে। কিন্তু আমি শতভাগ চেষ্টা করেছি আমার দ্বারা যেন একজন নিরপরাধ লোকও হয়রানির শিকার না হয়। তারপরও বলব যেহেতু আমি মানুষ, ভুলের উর্ধ্বে নই, আমার কোন আচরন বা কর্মকান্ডে কেউ যদি মনে বিন্দুমাত্র কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে আমাকে আপনার আপনজন, সন্তান ও ভাই হিসেবে ক্ষমা করে দিবেন। আমার নতুন বদলীকৃত কর্মস্থল সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ। অতঃপর কালিগঞ্জ বাসীর প্রতি সাতক্ষীরা সদর থানায় আমাকে দেখে আসার আমন্ত্রন রইল।
আমি কালিগঞ্জবাসী ও অত্র থানার সার্বিক কল্যান ও মঙ্গল কামনা করছি। সবাই আমার, আমার পরিবার এবং পুলিশ বাহিনীর জন্য দোয়া করবেন। পরিশেষে নবাগত অফিসার ইনচার্জ সাহেব কে, অত্র থানার পুলিশ সহকর্মী এবং কালিগঞ্জবাসী আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন ঠিক তেমনি করে নবাগত ওসি সাহেবকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। খোদা হাফেজ।
০২/০৫/২০২১
মোঃ দেলোয়ার হুসেন,
অফিসার ইনচার্জ,
কালিগঞ্জ থানা, সাতক্ষীরা।