“প্রতিদিন কত যে খবর আসে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার খবর রয়ে যায় অগোচরে”এমনই একটি খবর সাতক্ষীরা শহরের টাউন বাজারের রাস্তায় পড়ে থাকলেও কেউ খবর রাখেননি এমনকি খবর লেখেনি।
সরেজমিন এ বাস্তব খবরটি চোঁখে না দেখে বিশ্বাস করা কতটা কঠিত তা লিখে প্রকাশ করা যাবে না!!রাত্র ৮ টার সময় সাতক্ষীরা কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ী থেকে কাজ মিটিয়ে গেটের বাইরে আসতে নজরে পড়ে হাজারও চাকচিক্য আলোর মধ্যে টেমি জ্বালিয়ে (কেরোসিন দিয়ে জ্বালানো ল্যাম্প) সেই আলোয় চা বিক্রি করছে এক যুবক। মুখে খোচা,খোচা দাঁড়ি, লুঙ্গী পরা হাপহাতা শার্ট গায়ে চা তৈরি করছে।চা খাওয়ার অজুহাতে এগিয়ে গেলাম, চা নিলাম।এবার কথা বলার চেষ্টা করছি।যেহেতু ব্যক্তিগত কথা জানতে একটু আমতা,আমতা করছিলাম। তবে কথা জানতে চাওয়া মাত্রই একবুক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বল্লেন,সংসার নামের যাঁতাকলে পিষ্ট তবুও দুঃখ্য নেই!!!বয়স ৩২ নাম মোজাম্মেল হক বাবু।বাবা মৃত শেখ মোহাম্মদ আলীও টাউন বাজরে চা বিক্রি করতেন।বাবা মারা যাওয়ার পর সেও চা বিক্রির দোকানটা ধরে রেখেছে। ৮ বোনের এক মাত্র ভাই বাবু। চা দোকানি করে ৫ টা বোন বিয়ে দিয়েছেন।বর্তমান বিবাহযোগ্য আরও ৩ টা বোন, বিধবা বোনের ১৮ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে মাহিন রাহায়ান তাঁর মা সহ ৭ জনের সংসার চলে কেবলই চায়ের দোকানে।অভাবের সংসারে ঠিকমত খাওয়া চলে না। যে কারণে বোনদের লেখাপড়া বন্ধ।সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১ টা, আবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যস্ত বাবুর চা দোকান চলে।এখানে ছোট একটা বক্সের উপর তাঁর জীবন নামের সারথি যেন বইছে অজানায়। সংসারের হাল ধরতে কখন যে নিজের বিয়ের বয়স চলে গেছে নিজেও জানে না বাবু।বাবার রেখে যাওয়া খুপরি ঘরে সাতক্ষীরা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাটিয়া এলাকায় বসবাস।বাবা এ বাজারে চা বিক্রি করেছেন ৪০ বছর। এখন বাবু চা বিক্রি করছে ১৮ বছর।তাও অন্যের দোকানের বারান্দায়।ভোক্তার নেই যেমন বসার ব্যবস্থা তেমনি বাবুও দাঁড়িয়ে চা বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করেন।তা দিয়ে সংসার ঠিকমতে চলে না সেখানে দোকানে মালামাল ওঠানো তাঁর কাছে দুঃস্বপ্ন!!সরকারি সহায়তা বলতে মায়ের একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড। বাবুর স্বপ্ন কি জানতে চাইলে আক্ষেপ করে বলেন,আমি তো জীবন যুদ্ধের আহত সৈনিক।আমার তো স্বপ্ন থাকতে নেই!!তবে বোনদের পাত্রস্থ করা সহ যদি দোকানটা যুগোপযোগী করতে পারতাম তবে হয়তো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারতাম বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস,এম মোস্তফা কামাল বাবুর বিষয়টি সদয় নজর দিবেন বলে জানিয়েছেন।